ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ , ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​বাহা পরবে মাতলো সাঁওতাল গ্রামগুলো

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ০৮-০৪-২০২৫ ০৫:৪৪:৩৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-০৪-২০২৫ ০৫:৪৪:৩৬ অপরাহ্ন
​বাহা পরবে মাতলো সাঁওতাল গ্রামগুলো ​সংবাদচিত্র : ফোকাস বাংলা নিউজ
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতাল সম্প্রদায় নিজস্ব ঐতিহ্যে পূজা অর্চনা-নাচ-গানে বরণ করেছে ঋতুরাজ বসন্তকে। নিজস্ব সংস্কৃতি বাহা পরবে মাতলো গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল গ্রামগুলো। 

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের তল্লাপাড়া গ্রামে সেভেন ডে এ্যাডভেন্টিস্ট প্রি সেমিনারী স্কুল প্রাঙ্গণে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড এবং আর্টিকেল নাইনটিন এর সহযোগিতায় ও অবলম্বনের আয়োজনে বাহা পরব বা বসন্ত উৎসব উদযাপন করলো সাঁওতালরা। নাচে-গানে আনন্দ উল্লাসের মাধ্যমে ‘আদিবাসী’ সাঁওতালরা তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতিতে বাহা পরবের মাধ্যমে বরণ করেন ঋতুরাজ বসন্তকে। দিনভর ধর্মীয় পুজা-অর্চনা ও সাঁওতাল সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সাঁওতাল নারী-পুরষ ও কিশোরীগণ অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে সম্মাননীয় অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা, পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান রাফেল, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক জহুরুল কাইয়ুম, গাইবান্ধা প্রেস ক্লাব সভাপতি অমিতাভ দাশ, অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী, আইপি নিউজের চিফ এডিটর এ্যান্থনি রেমা, আদিবাসী-বাঙালী সংহতি পরিষদ সদর উপজেলার আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী মুসা, অবলম্বনের এ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর টনি চিরান, ব্রিটিশ সরেন, মাহবুব মুকুল, সাবিনা টুডু, সুরভী মার্ডি, অঞ্জলী রানী দেবী, নাজমা বেগম, সেলিনা আকতার সোমা, সাজেদা পারভীন রুনু, মনির হোসেন সুইট প্রমুখ। এতে সভাপতিত্ব করেন বাহা পরব উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক জেমস সরেন।

সাঁওতালরা আমাদের এ’দেশেরই নাগরিক, তাদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য এ’দেশের সংস্কৃতিরই অংশ উল্লেখ করে আলোচকরা, সাঁওতালদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় রাষ্ট্রীয় ও সামজিক উদ্যোগ গ্রহণ, সাঁওতালসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষাদান ও কালচারাল একাডেমি স্থাপন করার দাবি জানান। 

আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে স্থানীয় সরকার কাঠামোতেও এসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আলোচকরা বলেন, পরিবেশ, বনায়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগ যুগান্তরের সঞ্চিত অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ আদিবাসী জ্ঞান গ্রহণ এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদিবাসীরা সরকার ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবহেলার শিকার এবং এসব জ্ঞান ও তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে এখনই প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগ। 

বাহা পরব আয়োজক সংগঠন অবলম্বন-এর নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, প্রাণ-প্রকৃতিকে ভালোবেসে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী বাহা উৎসব পালন করে। ভবিষ্যতে যাতে এই ঐতিহ্যবাহী বাহা পরব হারিয়ে না যায়, সেজন্য নতুন প্রজন্মকে জানাতেই এই উৎসব আয়োজন।

উল্লেখ্য, আদিবাসী সাঁওতালদের অন্যতম একটি প্রধান পার্বণ হচ্ছে ‘বাহা উৎসব’ বা বাহা পরব। বাহা অর্থ ফুল। তাই বাংলায় বাহা পরবকে ‘ফুল উৎসব’ বলা হয়। মূলত: নববর্ষ হিসেবে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব পালন করে সমতলে বসবাসকারী ‘আদিবাসী’ সাঁওতালরা। উত্তরাঞ্চলে সমতলে বসবাসকারী ‘আদিবাসী’ জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ওঁড়াও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো, মালপাহাড়ী, রাজওয়ারসীসহ মোট ৩৮টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এই বাহা উৎসব পালন করে থাকে।



বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ